জাপানের হাতেই আজ এশিয়ার সম্মান

জাপানের হাতেই আজ এশিয়ার সম্মান

অতীত ইতিহাসকে যদি মানদণ্ড ধরা হয়, তাহলে বেলজিয়ামের চেয়ে বেশ এগিয়েই আছে জাপান। ফিফা র‌্যাংকিংয়ে বেলজিয়াম তিন নম্বরে হলে কী হবে, ষাট নম্বরে থাকা জাপানেরই কিন্তু মুখোমুখি লড়াইয়ে জয়ের স্মৃতি বেশি। এযাবৎ পাঁচবার খেলেছে ইউরোপ-এশিয়ার দুই দেশ। জাপান জিতেছে দু’বার, ড্রও দু’বার, বেলজিয়ামের জয় মাত্র একটি। কিন্তু অতীতের এসব তথ্যকে কেউ পাত্তা দিচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না। বেলজিয়াম-জাপান ম্যাচ নিয়ে যতদিকের যত প্রেডিকশন, তাতে বেলজিয়ামকে রাখা হচ্ছে যোজন যোজন ব্যবধান সামনে। রেড ডেভিলদের জাপান-জয় নিশ্চিত, অপেক্ষা কেবল ব্যবধানের- এমনটাই আবহ চারদিকে। কিন্তু গ্রুপ পর্বে কলম্বিয়াকে হারিয়ে দেওয়া জাপান কি প্রতিপক্ষ হিসেবে এতই সহজ হবে? জানা যাবে আজ রাত ১২টায় শুরু ম্যাচের শেষে। এ ম্যাচের জয়ী দলকে কোয়ার্টার ফাইনালে খেলতে হবে ব্রাজিল-মেক্সিকো ম্যাচের জয়ীর বিপক্ষে।

জাপান দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠেছে ‘এইচ’ গ্রুপের রানার্সআপ হয়ে। কলম্বিয়া ছাড়াও গ্রুপে ছিল সেনেগাল আর পোল্যান্ড। শেষ ম্যাচে পোল্যান্ডের কাছে ১-০-তে হেরেছে জাপান। দ্বিতীয় রাউন্ড নিশ্চিত করেছে ফেয়ার প্লে (কম কার্ড) সুবিধা নিয়ে। তার ওপর যে ম্যাচটিতে কলম্বিয়ার বিপক্ষে ২-১ গোলে জয় পেয়েছে, সেটিতে খেলার তৃতীয় মিনিটেই দশজনের দলে পরিণত হয় রাদামেল ফ্যালকাওর দল। সব মিলিয়ে খুব বেশি চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়নি জাপানকে। তবে এশিয়ার একমাত্র দেশ হিসেবে বিশ্বকাপের দ্বিতীয় রাউন্ডে দল হিসেবে সূর্যোদয়ের দেশটি এখন উজ্জীবিত। ব্লু সামুরাই নামের দলটি বিশ্বকাপে বেলজিয়ামের মুখোমুখি হয়েছে এর আগে মাত্র একবারই। ষোলো বছর আগের সেই ম্যাচে ২-২ গোলে ড্র করেছিল তখনকার স্বাগতিক জাপান। এমনকি গত বছরের নভেম্বরে প্রীতি ম্যাচে হেরে যাওয়ার আগ পর্যন্ত টানা চার ম্যাচ বেলজিয়ামের বিপক্ষে অপরাজিতও ছিল তারা। তবে সেই ম্যাচের চেয়ে দু’দলের বর্তমান অবস্থাটাই এখন মুখ্য। মাত্র তিনটি দল গ্রুপ পর্বে তিনটি ম্যাচই জিতেছে। তার একটি বেলজিয়াম। সবচেয়ে বেশি ৯ গোলও রবার্তো মার্টিনেজের দলটির।

ইংল্যান্ডের হ্যারি কেনের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ চার গোল রোমেলু লুকাকুর। ইংলিশদের বিপক্ষে ‘জি’ গ্রুপের শেষ ম্যাচে অবশ্য বিশ্রামে ছিলেন লুকাকু। তবে সম্পূর্ণ ফিট হয়ে আজ আবার মাঠে নামছেন তিনি। সেদিনের ম্যাচে নিয়মিত একাদশের নয়জনকে বসিয়ে রেখেছিলেন মার্টিনেজ। রোস্তভে আজ তাই ভিনসেন্ট কোম্পানি, থমাস ভারমায়েলেনরাও নামছেন। বেলজিয়ামের নিজেদের শক্তির দিকটি তো আছেই, জাপানের দুর্বলতাও তাদের জন্য সুবিধার হতে পারে। ইউরোপিয়ান প্রতিপক্ষের বিপক্ষে খেলা সর্বশেষ ছয় ম্যাচের পাঁচটিতেই তারা কোনো গোল করতে পারেনি। তবে ১৯৯৮ সালে বিশ্বকাপ অভিষেকের পর থেকে যে তিনবার জাপান দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠেছে, কোনোবারই বড় ব্যবধানে হারেনি। ২০০২ আসরে তুরস্কের কাছে হেরেছিল ০-১-এ, ২০১০ সালে প্যারাগুয়ের কাছে পেনাল্টি শুটে। এবারের আসরে দলের বড় ভরসা কেইসুক হোন্ডা। তৃতীয় বিশ্বকাপ খেলা এই অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার জাপানের করা সর্বশেষ দশটি গোলের সাতটিই অবদান রেখেছেন। এবার মাত্র ৩৮ মিনিট খেলার সুযোগ পেলেও গোল ও অ্যাসিস্ট দুটোই করেছেন। জাপানকে সহজ প্রতিপক্ষ ভেবে যারা বেলজিয়ামের কোয়ার্টার ফাইনাল নিয়ে ভাবছেন, তাদের সতর্ক করে দিয়েছেন মার্টিনেজ, ‘যারা শেষ আটের কথা ভাবছেন, তারা ঝুঁকি নিয়ে ফেলছেন। কারণ জাপানের দলটি সুসংগঠিত ও টেকনিক্যালি দারুণ। দলটিতে বৈচিত্র্য আছে। আমার তো মনে হয় সত্যিকারের প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ একটা ম্যাচ হবে এটি।’ জাপান কোচ আকিরা নিশিনো অবশ্য তাদের ইউরোপিয়ান প্রতিপক্ষকেই এগিয়ে রাখছেন, ‘তারা বিশ্বমানের দল। ওদের সামাল দেওয়াটা আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জিং।’

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment